শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরেই গড়বে ডিজিটাল বাংলাদেশ
Posted on 2017-12-20
বেসিস সভাপতি জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশে ধারনা এখন দেশের অতি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছেও স্বপ্ন থেকে বাস্তবের রূপ পেয়েছে। তারা প্রতি মুহূর্তে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পাচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়তে তাই আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ছি। ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা হচ্ছে সেই স্বপ্নের ভিত।
আমাদেরকে সেই শিক্ষাব্যবস্থাকে ডিজিটাল করতে হবে। আজ এখানে যার সূচনা হলো তা শিক্ষায় ডিজিটাল বীজ বপন করা মাত্র। একদিন এই কাজ মহীরূহে পরিণত হবে। ২৯ জুলাই ২০১৭ সকাল ১০টায় শরিয়তপুরের আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। বেসিস সদস্য নেটিজেন আইটি লিমিটেড এর এডুমেন সফটওয়্যার দিয়ে স্কুলটির ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার সূচনা করা হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ এর সভাপতিত্ত্বে অনুষ্ঠানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উপস্থাপনা করেন নেটিজেন লি: এর শাহাদাৎ হোসেন এবং ডিজিটাল শিক্ষা সফটওয়্যার উপস্থাপন করেন বিজয় ডিজিটাল এর প্রধান নির্বাহি জেসমিন জুঁই। মোস্তাফা জব্বার তার বক্তব্যে আরও বলেন, শিক্ষার ব্যবস্থাপনার সাথে বইকে সফটওয়্যারে রূপান্তর করতে হবে এবং ক্লাশরুম ব্যবস্থাপনাকেও ডিজিটাল করতে হবে। তিনি শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবক-অভিভাবিকাদেরকে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ দানের আহ্বান জানান। সনাতনী ধারনায় তাদেরকে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ও কম্পিউটার গেমস থেকে দূরে রাখা ঠিক নয় বলেও তিনি জানান। তিনি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে দামী পোশাক কিনে দেবার বদলে ডিজিটাল যন্ত্র কিনে দেবার আহ্বান জানান। তিনি শিক্ষকদেরকে ডিজিটাল যুগের শিক্ষক হিসেবে নিজেদেরকে প্রস্তুত করার অনুরোধও করেন। অনুষ্ঠানের বক্তারা শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে বিজয়-নেটিজেন-এর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং শরিয়তপুরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিজয় ডিজিটাল শিক্ষা এবং এডুমেন সফটওয়্যার প্রচলন করার অঙ্গীকার করেন।
বিস্তারিত
জঙ্গি চাইনা, প্রোগ্রামার বানাতে চাই
Posted on 2016-12-30
রেজা সেলিমকে আমি অনেক স্নেহ করি। ওর মতো লড়াকু মানুষ সচরাচর চোখে পড়েনা। এমন প্রযুক্তিমনস্ক মানুষ এবং তৃণমূলের সাথে তথ্যপ্রযুক্তিকে সম্পৃক্ত করার মতো যোদ্ধাও বিরল। বাগরেহাটে প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের জীবন পাল্টে দিতে সে অসাধারণ কাজ করে চলেছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রামের নারীদের ক্যান্সারের চিকিৎসা-ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ মানুষদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা বা শিশুদের জন্য ডিজিটাল শিক্ষার আয়োজনে রেজার অবদানের খবর দেশের অনেকেই রাখেন না।
আমিও হয়তো পুরোটা জানিনা। তবে ওর ডাকে আমি খুলনা-বাগেরহাট-রামপাল-শ্রীফলতলা ঘুরেছি বহুবার। সেই রেজা সেলিম গত ৩০ জুন ১৬ আমাকে একটি মেইল পাঠিয়েছিলো। সেদিনই সরকারের টেলিকম বিভাগ মাইক্রোসফটের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ে। রেজা সেলিম সেই প্রসঙ্গে কিছু কথা বলেছে। তার মেইলটি পাঠ করার আগে আমি স্মরণ করতে পারি যে ২৫ জুন ১৬ অনুষ্ঠিত বেসিস (বাংলাদেশ এসেসিয়েশন অব সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস) নির্বাচনে আমার নেতৃত্ত্বাধীন ডিজিটাল ব্রিগেড প্যানেলে আমরা স্লোগান দিয়েছিলাম, দেশের পক্ষে, দেশের সফটওয়্যার ও সেবাখাতের পক্ষে। সেই নির্বাচন সমাপ্ত হবার পর আমাদের নিজেদের কাছে দেশের সফটওয়্যার ও সেবাখাতের মানুষেরা কি ভাবে তার একটি দিক নির্দেশনা পৌঁছেছে। বেসিস-এর ৯টি পরিচালক পদের ৭টিতে আমরা জয়ী হয়েছি বিধায় আমরা মনে করতেই পারি যে আমাদের ঘোষণার সাথে বেসিস-এর ভোটাররা সংহতি প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনের পরপরই দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের জিন্নাতুন নুর আমার সাথে কথা বলে যার ভিত্তিতে ২৯ জুন ১৬ পত্রিকাটির প্রথম পৃষ্ঠায় আমার কিছু কথা প্রকাশিত হয়েছে। যদি সম্ভব হতো তবে পুরো আলোচনাটিই আমি তুলে ধরতাম। তবে সেই পরিমাণ ঠাঁই না থাকায় আমি সেখান থেকে অংশ বিশেষ তুলে ধরছি। “রপ্তানিবাজার দখল করতে পারাটা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য একটি অর্জন হবে। কিন্তু আমাদের কাছে মনে হচ্ছে যে, বাইরের দিকে তাকাতে গিয়ে নিজের ঘর আমি অন্যের দখলে দিয়ে দিচ্ছি। আমরা বাংলাদেশে ব্যাংকিং সফটওয়্যারের বাজার তৈরি করেছি। কিন্তু সে বাজার দখল করেছে বিদেশিরা। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে আমাদের দেশের বাজার ও আমাদের দেশের সফটওয়্যার বাণিজ্যে রপ্তানি শক্তিশালীকরণ। আমরা নিজেদের মেধা দিয়েই যেন এ বাজার সুরক্ষা করতে পারি।” আমি স্মরণ করিয়ে দিতে পারি যে আজকের প্রধানমন্ত্রী যখন প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হোন এবং আজকের বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব তোফায়েল আহমদ যখন প্রথমবারের মতো বাণিজ্য মন্ত্রী হোন তখন “হাও টু এক্সপোর্ট সফটওয়্যার ফ্রম বাংলাদেশ” নামক একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। তার নেতৃত্ত্ব দিয়েছেন ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। আমি তার সদস্য ছিলাম। আমরা সরকারের কাছে ৪৫টি সুপারিশ পেশ করেছিলাম। বেসিসের জন্মও সেই প্রতিবেদনের একটি সুপারিশের ভিত্তিতে। সেই থেকে শেখ হাসিনার সরকার দেশ থেকে সফটওয়্যার রপ্তানি করার জন্য সহায়ক সকল কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা যাই করে থাকিনা কেন, নিজের দেশের বাজারে আমাদের অবস্থা মোটেই ভালো নয়। জিন্নাতুন নুরের কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারে আমি বিষয়টি স্পষ্ট করেছি। আমি বলেছি, আমাদের ডিজিটাল ব্রিগেড প্যানেলের নির্বাচনী স্লোগানের মধ্যে (আমরা দেশের পক্ষে, দেশের সফটওয়্যার ও সেবাখাতের পক্ষে) আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কিত দিকনির্দেশনা আছে। আমরা বেসিসের জন্ম থেকে আন্তর্জাতিক সফটওয়্যার মার্কেট ও সফটওয়্যার রপ্তানির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আসছি। এ গুরুত্ব আমরা ধরে রাখব। অন্যদিকে বাংলাদেশে এখন যে বড় কাজগুলো হচ্ছে, তা দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো করতে পারছে না। এসব কাজ বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো করছে। এমনকি আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো টেন্ডারেও অংশ নিতে পারে না। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জীবনযাপন থেকে শুরু করে শিক্ষাব্যবস্থা সবকিছু ডিজিটাল করে চলেছে। এই হিসেব বিবেচনা করলে ১৬ কোটি বাংলাদেশির বাজার ইউরোপের প্রযুক্তি বাজারের চেয়ে বড়। আর বাংলাদেশে কেবল আমরা যাত্রা শুরু করেছি। অন্যরা এ বাজার অনেকটা নিঃশেষ করে দিয়েছে। সেদিক দিয়ে আমাদের বাজার অনেক বড়। আর আমরা নিজের বাড়ির বাজার যদি সুদৃঢ় করতে পারি তবে তা হবে আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। এজন্য সরকারের নীতি ও অবকাঠামোগত ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সরকারি কাজ করতে পারে, সে ধরনের আইন-কানুন সংশোধন করতে হবে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের যে মেধাসম্পদ আছে তার জন্য মেধা সংরক্ষণ, চর্চা ও বিকাশের জায়গাগুলোকে অব্যাহতভাবে সমৃদ্ধ করতে হবে। আমি মনে করি, সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, এর প্রাথমিক কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু বড় মাপের কাজগুলো এখনো বাকি আছে। এর মধ্যে বড় মাপের কাজ বলতে দুটো কাজ চিহ্নিত করা যায়। এর একটি, সরকারের নিজের ডিজিটালাইজেশন। অর্থাৎ সরকারি কাজগুলো সব ডিজিটাল পদ্ধতিতে হতে হবে। আরেকটি কাজ হচ্ছে শিক্ষার ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন। এ দুটো জায়গায় যদি ট্রান্সফরমেশন করা যায় তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণে আমাদের অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু চ্যালেঞ্জ অনেক বড়। এ দেশে চার কোটির মতো ছাত্র-ছাত্রী আছে। তাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ডিজিটাল করার জন্য সামগ্রিক পরিবর্তন; যেমন শিক্ষাদান পদ্ধতি, শিক্ষকের পরিবর্তন, পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন, পাঠদান পদ্ধতির পরিবর্তন এবং তাদের হাতে ডিজিটাল ডিভাইস পৌঁছানো এ ধরনের অনেক ব্যয়বহুল ও বিশাল কাজ আমাদেরকে করতে হবে। আর এটি সংশ্লিষ্টদের কাছেও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে শিশুশ্রেণি থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত ডিজিটালি পরিবর্তন আনা বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার হাতির মতো। দ্রুত ঘুরতে পারে না। কিন্তু সরকারের এই রূপান্তরটাও দ্রুত করা দরকার। আমরা আরও লক্ষ্য করছি যে, এ সরকার সাত বছর পার করেছে। কিন্তু এখনো একটি মন্ত্রণালয় বলতে পারবে না যে আমরা কাগজ ছাড়া কাজ করি। কাজটা এতো সহজে চুটকি বাজিয়ে করে ফেলার মতোও নয়। এ কথা ঠিক যে, কিছু ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে মানুষের সেবার জন্য কিছু তথ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এর মাধ্যমে আমরা কেবল যাত্রা শুরু করেছি, যা পুরো কাজের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে প্রকৃতপক্ষে গোটা দুনিয়ার চিত্র বদলে গেছে। শ্রমবাজারেও এর পরিবর্তন এসেছে। শ্রমবাজার দুই ধরনের। একটি হচ্ছে কায়িক শ্রমনির্ভর, অন্যটি মেধানির্ভর। এত দিন ধরে আমাদের শ্রমবাজার ছিল কায়িক শ্রমনির্ভর। কিন্তু এখন প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে আমাদের মেধাভিত্তিক শ্রমবাজারকে গুরুত্ব দিতে হবে। আর এজন্য আমাদের শ্রমশক্তিকে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষিত করতে হবে। দেশের সাইবার অপরাধ রোধে বেসিস কাজ করছে। বিশেষ করে এ ব্যাপারে ইন্টারনেট ব্যবহাকারীদের যেমন সচেতন হতে হবে, তেমন করে আমরাও গ্রাহকদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি। পাশাপাশি সরকারের সাইবার অপরাধ দমনে আইনগত ক্ষেত্রে অবকাঠামো ও জনগণের সচেতনতা তৈরি করতে হবে। আমরা আশা করছি সাইবার সিকিউরিটি আইন দ্রুত পাস হবে। কারণ আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা সেভাবে তৈরি হয়নি। আমাদের ডিজিটাল সিকিউরিটির জন্য এ খাতে আরও অর্থ করতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে, এখন লাঠি দিয়ে নয়, প্রযুক্তি দিয়ে অপরাধ দমন করতে হবে। এই প্রেক্ষিতে আমি রেজা সেরিমের মেইলটার কথা বলতে পারি। গত ৩০ জুন রেজা আমাকে মেইলটা পাঠায়। প্রিয় জব্বার ভাই, আজ সন্ধ্যায় আপনার সাক্ষাৎকার দেখছিলাম চ্যানেল ২৪-এ। তখন থেকেই ভাবছিলাম একটা লিখিত অভিনন্দন আপনাকে জানাই। একটু আগে এই খবরটি দেখে বুঝলাম বেসিস সভাপতির দায়িত্ব নেবার শুরুতেই আপনাকে কী রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। আজ আপনি যা যা বলেছেন আর আমি জানি আপনি যা বিশ্বাস করেন এই চুক্তি তার সম্পূর্ণ বিপরীতে। ২০০৫ সালে আমি আই টি ইউ-র সাইবার ফেলো হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেছিলাম। আমার অধ্যয়ন ও অভিজ্ঞতায় আমি বিশ্বাস করি যদি আমাদের দেশে সঠিক নীতিমালা থাকে তা হলে তথ্য প্রযুক্তির জগতে বর্তমানে দক্ষতার যে হালে আমরা পৌঁছাতে পেরেছি অন্তত ২০১৬ সালে এসে আমাদের বিদেশের (বা মাইক্রোসফটের) সাথে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে চুক্তি করার কোনই দরকার নেই। এই যে ভুল প্রবণতা তার জন্যে আপনি আমাদের দেশের মৌলিক সফটওয়্যার উদ্ভাবন ও বিপণন নীতিমালা প্রণয়নে করে বাংলাদেশের তরুণ মেধাবীদের জন্যে একটি মুক্তির পথ খুঁজে দেবেন আর তা আপনার নেতৃত্বেই সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করি। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, ২০১০ সালে আমি আমাদের দেশের ৪ জন অতি তরুণ বিজ্ঞানীদের দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম স্বাস্থ্য ডাটা সংরক্ষণের সফটওয়্যার তৈরি করিয়েছি যা আমাদের গ্রাম ক্যান্সার ই-হেলথ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। মাইক্রোসফট তখন এরকম কাজে তাদের সফটওয়্যার ব্যবহার করতে সে আমলে ২ মিলিয়ন ডলার চেয়েছিল। আমাদের করতে লেগেছিল ৩ লাখ টাকা। এই ডাটাবেজে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার মহিলার প্রায় অর্ধ কোটি উপাত্ত সংরক্ষিত আছে ও এই ডাটাবেজ সম্পূর্ণ নিরাপদ। এটা আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু রয়েছে (ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য তথ্য নিরাপত্তার কোন আইন না থাকায় আমরা নিজেরাই একটা অভ্যন্তরীণ নীতি করে নিয়েছি)। এ ছাড়া ক্যান্সার চিকিৎসায় মোবাইল ফোনের বেশ ক’টি আন্তর্জাতিক মানের সেবা পদ্ধতি নির্মাণের কাজে আমরা প্রবাসী বাংলাদেশি প্রযুক্তিবিদদের সহায়তা নিয়েছি যা খুবই অনুপ্রেরণামূলক। আমি যেটুকু বুঝি, আমাদের দরকার- ১। সফটওয়্যার তৈরি ও রপ্তানি বিপণনে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করে আমাদের সবগুলো দূতাবাসের কমার্শিয়াল শাখাকে সম্পৃক্ত করা; ২। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের অভ্যন্তরীণ কাজে সম্পৃক্ত করা; ৩। দেশে নিয়মিত নিত্য নতুন কাজের জন্যে ছেলেমেয়েদের উৎসাহিত করে দেশের ও বিদেশের বাজারে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়া। আপনি জানেন বহুকাল আগে থেকেই আপনার কাজ ও নেতৃত্বের প্রতি আমার অসীম শ্রদ্ধা রয়েছে। আপনার যে কান কাজে বিন্দুমাত্র সহায়তার প্রয়োজন হলে আমাকে পাবেন। আপনার স্নেহধন্য- রেজা সেলিম। আমার ধারণা পাঠকবৃন্দ রেজা সেলিমের বক্তব্য থেকে নিজেরা ধারণা করতে পারছেন, কিভাবে আমরা ভুল পথে হাঁটি। আমরা দেশের ডিজটাইজশনের জন্য যেভাবে ভুল পথে হাঁটি সেটি ছেড়ে দেশের মেধা, দেশের সফটওয়্যার দিয়ে আসুন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ি। রেজা সেলিমের মেইলের পর দেশে আরও ঘটনা ঘটেছে। গুলশানের রেস্তোরা এবং শোলাকিয়ার ইদ জামায়াতের কাছে জঙ্গী হামলা হয়েছে। দিনে দিনে তার রহস্য উন্মোচিত হচ্ছে। আমরা এখন এটি জানি যে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলায় জড়িতরা উচ্চশিক্ষিত এবং তারা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করছে জঙ্গিবাদের প্রসারের জন্য। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে বিষয়টি আন্তর্জাতিকও হয়ে পড়েছে। আমি মনে করি প্রযুক্তিগত অপরাধকে প্রধানত প্রযুক্তি দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে। বেসিস মনে করে বাংলাদেশ একটি ভাষারাষ্ট্র। এর জন্মের নীতি, আদর্শ ও লক্ষ্যকে ডিজিটাল প্রযুক্তি দিয়ে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেয়া ও নতুন প্রজন্মকে দেশটির জন্মের অঙ্গীকারের সাথে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। আমরা জঙ্গি চাইনা, প্রোগ্রামার বানাতে চাই। আমাদের সন্তানদের মেধা বিপথে যেতে দিতে চাইনা, ডিজিটাল যুগের কাজে লাগাতে চাই।
বিস্তারিত
ডিজিটাল শিক্ষা শিশুর অধিকার
Posted on 2016-12-04
মুজিবুর রহমান স্বপন এখন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সহ-সভাপতি। ছয় বছর যাবত এক নাগাড়ে সমিতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমার সাথেও সমিতিতেই কাজ করেছে চার বছর। এর বাইরেও বাংলাদেশের অন্যতম সেরা কম্পিউটার বাজার বিসিএস কম্পিউটার সিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছে। আমি যে কেবল স্বপনকে স্নেহ করি সেটাই নয়, স্বপন আমার কাছে অনেক দক্ষতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন একজন মানুষ।
ছাত্রজীবনে রাজনীতি করতো বলে মানুষের সাথে কাজ করার ক্ষমতা অসাধারণ। কম্পিউটারের মেলা সাজাতে তার তুলনা বিরল। আমি যখন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি ছিলাম তখন সবার আগে স্বপনকে কম্পিউটার মেলার দায়িত্ব দিতাম। অবশ্য কম্পিউটারের মেলা করার জন্য আমার হাতে মানুষই ছিলো তিনজন; স্বপন, শফিক ভাই ও সাইদ মুনীর। বিসিএস কম্পিউটার সিটিতেও মেলার আয়োজন করার কাজটা স্বপন অহরহ করে। কদিন আগে জানিয়েছিলো যে, বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে ১৮ জানুয়ারি ২০১৬ থেকে মেলা করবে। মেলার উদ্বোধন, অতিথি ও কর্মসূচিসমূহ নিয়ে কথা বলতে বলতে জানালো, এবারের মেলায় সে শিশুদেরকে গুরুত্ব দিতে চায়। তখন সে মেলার শ্লোগান প্রস্তাব করেছিলো, “কম্পিউটার দিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করা শিশুর অধিকার”। স্বপন জানে যে, মেলার শ্লোগান নিয়ে আমার আগ্রহ বহুদিনের। “শুল্ক ও ভ্যাটমুক্ত কম্পিউটার চাই” শ্লোগান থেকে “একুশের স্বপ্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ” শ্লোগানগুলো আমারই দেয়া। আমি স্বপনের প্রস্তাব শুনে বললাম, তুমি কেবল “ডিজিটাল শিক্ষা শিশুর অধিকার” এই শ্লোগানটা দাও। ১৭ জানুয়ারি ১৬-এর পত্রিকায় ওদের সাংবাদিক সম্মেলনের খবর পড়ে আনন্দিত হলাম এটি দেখে যে, স্বপন আমার দেয়া সেই শ্লোগানটাকেই মেলার প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছে। ১৮ জানুয়ারি সেই মেলার উদ্বোধন হয়েছে এবং সেই আলোকেই মেলাকে শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় করার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। আমি স্বপন ও বিসিএস কম্পিউটার সিটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সকলকে এজন্য অভিনন্দিত করি। অনেকেই অবাক হতে পারেন যে, কম্পিউটার বিক্রি করে এমন একটি বাজারের মেলার শ্লোগান শিশুদেরকে নিয়ে কেন? সচরাচর আমরা বুঝি যে, শিশুরা চকলেট কিনবে, খেলনা কিনবে বা শিশুদের জন্য ব্যবহার্য সামগ্রীর প্রতি তাদের আগ্রহ থাকবে। বাজারজাতকরণের সূত্র অনুসারে এমন বিষয়কেই কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে রাখা উচিত যে, বিষয়টি ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে। অন্যদিকে তাদেরকেই ক্রেতা হিসেবে গণ্য করা উচিত যাদের কেনার জন্য আর্থিক ক্ষমতা আছে যা যারা কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কম্পিউটারতো এখনও শিশুদের প্রিয় বস্তু নয় বা তারা কম্পিউটার কেনার সিদ্ধান্তও নিতে পারে না। সেই অবস্থাতে শিশুদের কথা ভাবা কি সঠিক হলো? আমি মনে করি, শিশুদের বিষয়টি আমরা বহুদিন ধরে অবহেলা করে আসছি। এমনকি কম্পিউটারকে শিক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার কথাই আমরা ভাবিনি। প্রথাগতভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য-শিল্প-কল-কারখানা কম্পিউটার ব্যবসায়ীদের ভাবনার কেন্দ্রে রয়েছে। কোনো কোনো সময় সরকারের কথাও ভাবা হয়। কিন্তু দেশের চার কোটি ছাত্র-ছাত্রীর কথা মোটেই ভাবা হয় না। আমি মনে করি শিশুতো বটেই সামগ্রিকভাবে শিক্ষা খাত আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কেন্দ্রতেই বিবেচিত হতে পারে। সম্ভবত এটি এই খাতের সবচেয়ে বড় হার্ডওয়্যার বাজার। শিক্ষার ডিজিটাল কনটেন্টও হতে পারে বিশাল একটি ক্ষেত্র। এর কারণটি হচ্ছে যে বাংলাদেশে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৪ কোটি এবং শিশুদের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। ওরা এখন বই-খাতা-কলম দিয়ে পড়াশোনা করে। বড়দের কেউ কেউ ল্যাপটপ জাতীয় যন্ত্র ব্যবহার করে। ওদের হাতে নিজেদের স্মার্ট ফোনও থাকে। কিন্তু শিশুরা না হতে পারে কম্পিউটারের মালিক না হতে পারে স্মার্ট ফোনের অধিকারী। ওদের হাতে বাবা-মার স্মার্ট ফোনটা হয়তো কখনও খেলনা হিসেবে পৌঁছে এবং তারা তাতে গেম খেলে আনন্দ পায়। এই শিশুদের হাতে যদি ডিজিটাল ডিভাইস হিসেবে কম্পিউটার দেয়া যায় তবে সেই সংখ্যাটি হবে দুই কোটি। বিষয়টি এখানেও থামবে না। প্রতি বছর নতুন শিশুর জন্ম হচ্ছে এবং কেবলমাত্র প্রাথমিক স্তরে প্রতি বছর অন্তত ২৫ লাখ নতুন শিশু যোগ দেয়। দুই কোটি বিদ্যমান শিশুর সাথে যদি প্রতি বছরের ২৫ লাখকে যোগ করা যায় তবে আমরা বুঝতে সক্ষম হবো যে মুজিবুর রহমান স্বপন অত্যন্ত দূরদর্শী একটি সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে যে, শিশুদের হাতে কম্পিউটার নামক ডিজিটাল যন্ত্র কিভাবে পৌঁছানো যাবে। এরই মাঝে আমরা সরকারকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা স্তরে কম্পিউটার ল্যাব গড়ে তুলতে দেখছি। আমাদের সরকার ও নীতি নির্ধারকরা মনে করেন যে কম্পিউটার শেখা এবং কম্পিউটার দিয়ে শেখার জন্য ডিজিটাল ক্লাশরুম গড়ে তোলাটা কেবল তরুণ-তরুণীদের বা যুবাদের জন্যই হওয়া উচিত। যদিও কোনো কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এরই মাঝে একটি করে ল্যাপটপ বা কোথাও একটি ল্যাপটপ-একটি প্রজেক্টর দেয়া হয়েছে তথাপি শিশুদের কথা, তাদের ক্লাশরুম বা শিক্ষকের কথা মোটেই ভাবা হযনি। আমার এই ভাবনাটি অনেক আগের। আমি ৮৭ সালে অ্যাপল কম্পিউটারকে শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে দেখেছি। আমি মালয়েশিয়ার স্মার্ট স্কুল দেখেছি। আমি ডেনমার্কের স্কুলের জন্য সফটওয়্যার বানিয়েছি। আমি ৯৭ সালে আমেরিকা থেকে সফটওয়্যার এনে নিজের ছেলেকে পড়িয়েছি। সেই ভাবনা থেকেই ১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর গাজীপুরের ছায়াবিথীতে আমি একটি স্কুল গড়ে তুলি। গাজীপুরের আজিমউদ্দিন কলেজের শিক্ষক মজিবুর রহমানের পরিচালনায় স্কুলটির উদ্বোধন করেন ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী ও তার স্ত্রী সেলিনা মল্লিক। সেখানেই আমরা বাংলাদেশের শিশুদের জন্য প্রথম কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করি এবং তাদের ক্লাশরুমে কম্পিউটার নিয়ে গিয়ে কম্পিউটার দিয়ে লেখাপড়া করানো শুরু করি। তবে যে সমস্যাটি তখন তীব্র হয় সেটি হচ্ছে বাংলাদেশের পাঠ্য বিষয় নিয়ে বাংলায় তৈরি ডিজিটাল কনটেন্ট পাওয়া যায়নি। আমার নিজের পরিচালনায় ৩২টি মাল্টিমিডিয়া সেন্টার থেকে এ ধরনের কনটেন্ট তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েও গুণগত মান ভালো না হওয়ায় সুবিধা করতে পারছিলাম না। অবশেষে ২০০৯ থেকে বিজয় ডিজিটালের প্রধান নির্বাহি জেসমিন জুই ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির নেতৃত্ব গ্রহণ করার পর ২০১১ সালে প্রথম বিজয় শিশু শিক্ষা আত্মপ্রকাশ করে এবং এরপর থেকে অবিরাম কাজ করতে করতে আমরা ২০১৬ সাল নাগাদ প্রাক প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সফটওয়্যার তৈরি করতে সক্ষম হই। জেসমিন ও তার বাহিনীকে এজন্য অভিনন্দন। ওরা আমার স্বপ্নটাকে পূর্ণতার দিকে নিয়ে এসেছে। বস্তুত ২০১১ সাল থেকেই এদেশের শিশুরা কম্পিউটার দিয়ে লেখাপড়া করার জগতে দারুণভাবে প্রবেশ করে। অনেকেই ব্যক্তিগত কম্পিউটারে আমাদের সফটওয়্যারগুলো ইন্সটল করে শিশুদেরকে তাদের শিক্ষা গ্রহণে সহায়তা করতে থাকেন। এরই মাঝে সরকারের এটুআই টিচার লেড কনটেন্ট নামক এক ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করে। সরকারের আইসিটি ডিভিশন বিনা টেন্ডারে ব্র্যাক নামক একটি এনজিওকে দিয়ে প্রাথমিকের সফটওয়্যার তৈরির উদ্যোগ নেয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও ব্র্যাককে দিয়ে একইভাবে বিণা টেণ্ডারে ষষ্ঠ শ্রেণির ডিজিটাল কনটেন্ট বানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সাবেক শিক্ষা সচিব এন আই খান এক সময়ে ষষ্ঠ শ্রেণির সকল ছাত্র-ছাত্রীকে ২৫ লাখ ট্যাব দেবেন বলেও ঘোষণা করেছিলেন। তবে এসব কাজের কোনোটাই আলোর মুখ দেখার আগে আমরা একটি সাহসী উদ্যোগ নিতে সক্ষম হই। নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার আরবান একাডেমির প্রথম শ্রেণির ৪০টি শিশুর হাতে আমরা ৮ ইঞ্চির একটি ডিজিটাল ডিভাইস দিতে সক্ষম হই। মাত্র নয় হাজার টাকায় অরিজিনাল উইন্ডোজসহ এই ডিভাইসটিতে দেয়া হয় বিজয়-এর সকল শিক্ষামূলক সফটওয়্যার। ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ এই ক্লাশরুমটির উদ্বোধন করেন নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক তরুণ কান্তি শিকদার। সেদিনের ফিতা কাটার ক্ষণটিতে আমি, জেসমিন, পরমাসহ স্থানীয় বিশিষ্টজনেরাও ছিলাম। এরপর আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল গৌরীপুরের শিশু শ্রেণির সকলকে এই ডিজিটাল ডিভাইস প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর বাইরেও অন্তত ২৫টি স্কুলে এই ডিভাইস পরীক্ষামূলকভাবে প্রদান করা হয়। আমি প্রত্যাশা করছি সরকারের টেলিকম বিভাগ সহসাই দেশের ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সকল ছাত্র-ছাত্রীর হাতে এ ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস দেবার জন্য একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। প্রসঙ্গটি জাতীয় মিডিয়ারও দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ১৮ জাুনয়ারি ১৬ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ছাপা হয় একটি খবর। এর শিরোনাম ছিলো, “পুরোপুরি ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশু আনন্দের সঙ্গেই শিখতে পারে।” খবরটিতে অ্যাপল কম্পিউটার থেকে আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল গড়ে তোলা এবং নিজস্ব ইন্টারঅ্যাকটিভ মাল্টিমিডিয়া সফটওয্যার তৈরির বিবরণ দেবার পর নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলার আরবান স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের অভিজ্ঞতার বিবরণও প্রদান করা হয়। এতে বলা হয়, “নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার আরবান একাডেমির অধ্যক্ষ সৈয়দ আরিফুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিদ্যালয়টির ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে বিজয় শিশুশিক্ষার প্রাক্-বিদ্যালয় বিষয়বস্তুগুলো শ্রেণিকক্ষে বড় পর্দায় দেখানো শুরু করি। এতে বেশ ভালো ফল পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীরা আগ্রহের সঙ্গে পড়াশোনা করে।’ এরপর তিনি ভেবে দেখেন, যদি প্রতিটি শিশুর হাতে তা পৌঁছে দেওয়া যায়, তবে আরও ভালো হয়। এর মধ্যে বিজয় শিশুশিক্ষা দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা উপকরণ তৈরি করে ফেলে। এগিয়ে আসে বেসরকারি সংস্থা ডিনেট। ওদিকে মোস্তাফা জব্বার সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে চেষ্টা চালিয়ে যান স্বল্পমূল্যে ট্যাবলেট কম্পিউটারের খোঁজে। অবশেষে সব ব্যবস্থা হয়ে গেলে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর আরবান অ্যাকাডেমির প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া ৪০ শিক্ষার্থীর হাতে কি-বোর্ডসহ ট্যাবলেট কম্পিউটার তুলে দেওয়া হয়। ‘স্বদেশ’ নামের এই ট্যাবলেট কম্পিউটার বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে শিশুদের পাঠদানের উপযোগী করে। প্রতিটি ট্যাবলেটে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রথম শ্রেণির সিলেবাস অনুসরণ করে তৈরি করা বিজয় প্রাথমিক শিক্ষা-১ সফটওয়্যার ইনস্টল করা আছে। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে চলা এসব কম্পিউটার ও ডিজিটাল শ্রেণিকক্ষের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বিজয় ডিজিটাল। সৈয়দ আরিফুজ্জামান ২০১৮ সালের মধ্যে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর হাতে এই ট্যাবলেট কম্পিউটার পৌঁছে দেওয়ার আশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘খুব দ্রুত এই শিক্ষার্থীরা ট্যাবলেট কম্পিউটারের ব্যবহার আয়ত্ত করে ফেলেছে। শিখছেও দ্রুত। এই মাধ্যমে শিক্ষা খুব কার্যকর হচ্ছে।’ আশির দশকে যুক্তরাষ্ট্রে যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছে, আমাদের দেশে তা হচ্ছে এত দিন পর। তবু তো চাকা গড়াল। সে জন্যও উদ্যোক্তারা একটা ধন্যবাদ তো পেতেই পারেন। তথ্যপ্রযুক্তির হাত ধরে একদিন জ্যোতির্ময় বাংলাদেশ গড়ে উঠবে এমনটাই সবার প্রত্যাশা। কেবল পূর্বধলার অভিজ্ঞতাই নয়, আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল, গৌরীপুর, ই-বর্ণমালা স্কুল নোয়াপাড়া যশোর, ইংলিশ ভারসন স্কুল মিরপুরসহ অন্তত শ খানেক স্কুলে বিজয়-এর সফটওয়্যারসহ মিনি ল্যাপটপ পৌঁছেছে। কেউ কেউ ছাত্র-ছাত্রীদের হাতেও এই মিনি ল্যাপটপ পৌঁছে দিয়েছেন। কেউ কেউ ক্লাশরুমটাকে ডিজিটাল করেছেন।
বিস্তারিত